কামরুল ইসলাম হৃদয়, চট্টগ্রাম :
দখলস্বত্ব মূলে রেলওয়ের শতকোটি টাকার জায়গা দখলে রাখতে মরিয়া চট্টগ্রামে অবস্থিত দেশের শীর্ষস্থানীয় দুটি শিল্পগ্রুপ পিএইচপি ও কেএসআরএম। জায়গাটি দখলে রাখতে একের পর এক চলছে দখল-পাল্টা দখল। এ ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও দিশেহারা। আর সুযোগ বুঝে বিরোধ মেটাতে এগিয়ে এসেছেন সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এম এ লতিফ। তিনি গনমাধ্যমকে বলেন, পিএইচপি-কেএসআরএম দুই পক্ষই হাজার কোটি টাকার মালিক। তবুও তাদের আরও টাকা চাই, সম্পদ চাই। রেলের জায়গার দখল নিয়ে তারা মারামারি করবে, এটা ভাবা যায় না।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীতাকুন্ডের বাড়বকুন্ডে পিএইচপি ফোট গ্লাস ইন্ডাস্ট্রিজের কারখানা। এর পেছনে রেললাইন। এরপর আছে ১৬০ একর জমির উপর পিএইচপির গড়ে তোলা বনায়ন প্রকল্প। ওই জমিও রেলওয়ের। আর এই বনায়নের প্রবেশ পথে রেলওয়ের ১ দশমিক ৬৪ একর জমি আছে। যেটা পার হয়ে সেই প্রকল্পে যাওয়া যায়। আর কেএসআরএম সীমানা বেড়া দিয়ে ওই জায়গা দখলে নেয়। পিএইচপির লোকজন এসে আবার সেটি ভেঙে দেয়। কেএসআরএম’র আবারও বেড়া দেয়। এভাবেই চলছে দখল আর পাল্টা দখল।

স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, দুই সপ্তাহ আগে কেএসআরএম আকস্মিকভাবে ১ দশমিক ৬৪ একর জায়গার সীমানা ধরে খুঁটি গেড়ে কাঁটাতারের বেড়া দেয়। এর ফলে পিএইচপির বনায়ন প্রকল্পে ঢোকার পথ বন্ধ হয়ে যায়। এসময় পিএইচপির কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিবাদ করেন। জায়গার কাগজপত্র কি আছে দেখাতে বললে কেএসআরএম’র কর্মকর্তারা সেখান থেকে চলে যান। পরে পিএইচপির পক্ষ থেকে সেই সীমানা বেড়া ফেলে দেওয়া হয়। কেএসআরএম বিষয়টি সুরাহার জন্য চট্টগ্রাম চেম্বারের দ্বারস্থ হয়। চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি ও সংসদ সদস্য এম এ লতিফ চেম্বার ভবনে দুইপক্ষকে নিয়ে মধ্যস্থতা বৈঠকে বসেন। বৈঠকে উভয়পক্ষকে ইজারা নেওয়ার কাগজপত্র দাখিলের জন্য বলা হয়। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার আগ পর্যন্ত উভয়পক্ষকে ওই জায়গা নিয়ে আর কোনো বিরোধে না জড়াতে বলা হয়। কিন্তু ২৯ মার্চ আবারও কেএসআরএম’র পক্ষ থেকে খুঁটি গেড়ে কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে জায়গাটি দখলে নেওয়া হয়। এসময় আবারও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

এ বিষয়ে সীতাকুন্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইফতেখার হাসান বলেন, রেলের জায়গা। পিএইচপি-কেএসআরএম উভয়পক্ষ বলে জায়গাটা তাদের। এটা নিয়ে ঝামেলা লেগেই আছে। সবসময় আমাদের সেখানে দৌড়াতে হয়। এত বড় বড় কোম্পানি, তারা যদি জায়গা নিয়ে মীমাংসায় আসতে না পারে, এটা আমাদের জন্যও সমস্যা। পিএইচপির মহাব্যবস্থাপক (ভূসম্পত্তি) আমির হোসেনের দাবি, ২০০৫ সালে দুই ভাইয়ের কাছ থেকে ইজারা হস্তান্তর মূল্যে রেলওয়ের এই জায়গার দখলস্বত্ব পিএইচপির। কেএসআরএম’র উপ মহা-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেনের দাবি, ১৯৮০ সালে ইজারা নেওয়া নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তির ২০১৬ সালে ইজারা হস্তান্তর মূল্যে রেলওয়ের এই জায়গার দখলস্বত্ব কেএসআরএম’র। কিন্তু শর্তানুযায়ী ইজারা সম্পত্তি হস্তান্তর যোগ্য নয় বলে জানান ওসি।

পিএইচপির মহাব্যবস্থাপক বলেন, কেএসআরএম জোর দেখাচ্ছে। জোর দেখিয়ে তো আর দুনিয়া চলে না। পিএইচপি কারও সঙ্গে শুধু শুধু বিরোধ সৃষ্টি করেছে, এমন রেকর্ড কি আছে? জায়গা যদি তাদের হয় আমরা কেন দখল করতে যাব?

কেএসআরএম’র উপ মহা-ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী সাখাওয়াত হোসেন বলেন, আমরা কারও জায়গা দখল করতে যাইনি। সকল বৈধ ডকুমেন্ট অনুযায়ী এটি আমাদের জায়গা। এটির সীমানা খুঁটি নড়বড়ে হয়ে যাওয়ায় তা বসানোর কাজ করা হয়েছে। প্রসঙ্গত কেএসআরএম সীমানা খুঁটি ও বেড়া স্থাপনের পর আবারও পিএইচপির বনায়ন প্রকল্পে প্রবেশের পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

পিএইচপি জানিয়েছে, ১৬০ একর আয়তনের এই প্রকল্পের মধ্যে ৫ একর জায়গায় দেশের বিলুপ্ত প্রায় বনজ সম্পদ রক্ষার জন্য বিশেষ একটি প্রকল্প (আরবোরেটম) আছে। এই বনায়নে সেগুন, মেহগনি, গর্জন, গামারি, চাপালিসসহ বিভিন্ন প্রজাতির ১ লাখ ৬ হাজার ৯৩৭টি গাছ আছে। প্রবেশপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গাছপালাগুলো পরিচর্যা করা যাচ্ছে না। এতে বিলুপ্ত প্রায় বনজ সম্পদের ক্ষতির আশংকা করছেন তারা।